মানে তোমাকে যদি বিয়ে না করতে পারি তাহলে আমার টাই বেঁধে কে দিবে .....

-মিরা টাই টা একটু বেঁধে দাও তো !
মিরা আমার দিকে এমন ভাবে ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে আছে যেন আমি অন্য কোন ভাষায় ওর সাথে কথা বলেছি ! এই মেয়েটা সব সময় এমন বিরক্ত হয়ে কেন তাকিয়ে থাকে কেন কে জানে ? এর বাবা মা ভাই কেউই তো এমন করে কথা বলে না !

আমি আবার মিরার চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম
-কানে সমস্যা তোমার ?
-মানে ?
-নাকি বাংলা বুঝো না ? বাংলা ? ইংরেজিতে বলবো নাকি হিন্দিতে ?
মিরা মুখ আরো কঠিন করে বলল
-আপনি আমার সাথে ইয়ার্কি মারছেন ?
-তোমার সাথে আমি ইয়ার্কি কেন মারবো ? তুমি তো আমার শ্যালিকা হও না, তাই না ? তোমার ছোট ভাই অবশ্য আমার শ্যালক ....
-চুপ ! আপনি আর একটা কথা বলবেন না ! কি জন্য এসেছেন বলেন ? আমি ভার্সিটিতে যাবো !
-আরে আমিও তো অফিস যাবো ! এই জন্য তোমার কাছে এসেছি ! দেখো টাই বাঁধতে পারছি না ! একটু কষ্ট করে যদি বেঁধে দিতে !
-দিস ইজ টু মাচ !

-আরে একটু বিপদে পড়েছি । প্রতিবেশী হিসাবে একটু সাহায্য করবে না ?
মিরা কিছু বলতে যাবে তার আগেই মিরার মাকে পিছনে দেখা গেল ! আন্টির হাতে আটা জাতীয় কিছু লেগে আছে । আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-কি ব্যাপর মিরা ? ছেলেটার সাথে এমন করে কেন কথা বলছিস ?
মিরা কোন কথা বলল না ! আমি বললাম
-দেখেন একটু হেল্প করতে বলছি করছে না । টাইয়ের নট খুলে গেছে কিছুতে বাঁধতে পারছি না ! টাই বাঁধতে পারি না বলে নটটা খুলিও না কোন দিন কিন্তু এখন কি করি বলেন তো !

মিরা আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-টাই বাঁধতে পারেন না টাই পরার দরকার কি ?
-এই কথা তো আর বস শুনবে না !
মিরার মা পেছন থেকে বলল
-টাই বাঁধতে পারে না তো কি হয়েছে ? তোর বাবাও তো টাই বাঁধতে পারে না । আমার হাতে আটা লেগে আছে । তুই একটু বেঁধে দে !
-মা !!!
-আরে কি আশ্চর্য ! একটু টাই বেঁধে দিলে কি হবে ?
মিরার মা আমাকে বেশ পছন্দ করে সেই শুরু থেকে । বিশেষ করে মা যখন বড় ভাইয়ের বাসা থেকে মাঝে মাঝে আমার এখানে আসে দেখি দুজনে মিলে কত কথা বলে । যেন হারানো দুই বান্ধবী ! কি কথা বলে কে জানে !
আমি দরজা দিয়ে একটু ভেতরে ঢুকে মিরার সামনে টাইটা এগিয়ে দিলাম । মিরা মুখে বিরক্তি নিয়ে আমার টাই বাঁধতে লাগলো !

আমি বললাম
-তুমি আমার উপকার করছো বদলে আমি তোমাকে ভার্সিটিতে পৌছে দেই !
-জি না, ধন্যবাদ ! আমার উপকার আপনার করার দরকার নেই !
আবারও আমার উপকারে মিরার মা এগিয়ে এল । রান্না ঘর থেকেই বলল
-কেন যাবি না ?
-মা ! আমি যেতে পারবো !
-যাবি তো বাসে করেই ! গাড়িততে করে গেলে কি হবে ?
-মা আমি ভার্সিটির গাড়িতে করে যাবো ! তোমার এতো চিন্তা করতে হবে না !
স্বাধারনত মিয়া কোন দিন আমার সামনে, এটো কাছে আসে নি ! আমার কেন জানি মনে হল মিরা আমার বিয়ে করা বউ ! অফিসে যাওয়ার সময় ও আমার টাই টা বেঁধে দিচ্ছে ! আহা !
জীবন কি চমৎকার !

মিরাদের পাশে ভাড়া এসেছি সেই বছর খানেক হল কিন্তু এই মেয়েটা কে আমি এখনও ঠি মত বুঝতে পারলাম না ! মিরার বাবা মা ছোট ভাইয় রিয়াদের সাথে আমার সম্পর্ক অনেক ভাল ! যখন বাসায় থাকি রিয়াদ বেশির ভাগ সময় তো আমার বাসায় থাকে । আমার সাথে তার কত কথা ! আমার কাছ থেমে টিপস নিয়ে মেয়েদের পটিয়ে ফেলে অথচ তার বোনকে আমি আজও পটাতে পারলাম না !

এই মেয়ের সমস্যা কি কে জানে । প্রথে ভেবেছিলাম হয় তো ওর কোন প্রেমিক আছে কিন্তু খোজ নিয়ে জানতে পারলাম এরকম নেই । এমনও না যে ওর কোন ছেলে বন্ধু নেই । অথচ আমার দিকে তার একদম লক্ষ্য নেই !
বদ মেয়ে !

থাপড়ায়া কান গরম করে দেওয়া উচিৎ !
মায়ের কথা মত, নাকি অন্য কোন কারনে, মিরা শেষ পর্যন্ত গাড়িতে উঠে এল । আমার অফিস যাওয়ার পথেই ওর ক্যাম্পাস পড়ে । সুতরাং নামিয়ে দিতে কোন সমস্যা হবে না । আমি তো চাই ও প্রতিদিন আমার সাথেই ক্যাম্পাসে যাক ! কিন্তু চাইলেই কি সব কিছু হয় !
ওর ক্যাম্পাসের সামনে আসতেই ও নেমে পড়লো !
-আরে কই যাও ?
-কেন ?
-না মানে কিছু বলবা না ?
-কেন বলবো ? আমি আপনার একটা উপকার করেছি, আপনি আমাকে একটা উপরকার করেছেন । ব্যস । কাটাকাটি ! ওকে ? বাই !
আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে মিরা হাটা দিল !
নাহ ! এই মেয়ের আশা মনে হয় ছেড়েই দিতে হবে দেখছি !
বদ মাইয়ার পেছনে আর কত ঘুরবো !
আশা যখন ছেড়ে দিবো দিবো ভাবছি তখনই যেন আশার আলো জ্বলে উঠলো ! ঐ দিন বিকেল বেলা মিরার ফোন এসে হাজির ! আমি তো প্রথেম ঠিক বিশ্বাসই করতে পারি নি !
-আপনি কোথায় ?
-অফিসে !
-কখন আসবেন ?
-তুমি বললেন এখনই আসি ?
-না আসতে হবে না । কাজ শেষ করে আসেন !
-কোথায় আসবো ? ধানমন্ডি ক্যাফে আসেন ! এসে আমার বান্ধবীদের বলবেন যে আমার সাথে আপনার কিছু চলছে না !
-তোমার সাথে আমার কি চলবে ?
-দেখেন ঢং করবেন না ! আপনি আর রিয়াদ মিলে আমার সাথে আজকে যে কাজটা করলেন, ওকে যদি হাতের কাছে পাই না !
-রিয়াদ ! ও আবার কি করলো ?
-শুনেন ঢং করবে না ! আপনাকে যা বলতে বলেছি তাই বলবেন ! একটা কথা বেশিও, না কমও না !

আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে মিরা ফোন রেখে দিল ! এই মেয়ের সমস্যা কি ? সারাটা সময় এতো রেগে রেগে থাকে কেন ? আর রিয়াদ আর আমি কি এমন করলাম !
রিয়াদ কে ফোন দিলাম ।
-রিয়াদ !
-ভাইয়া বলেন ?
-কোথায় তুমি ?
-আপাতত বাড়ির বাইরে ! কি বলবেন বলেন ?
-তোমার আপু এমন করে রেগে আছে কেন বলতো ? আমি আর তুমি মিলে কি নাকি করেছি ? কি বলছে ?
রিয়াদ কিছুক্ষন হাসলো ! তারপরপ বলল
-আপনি ফেসবুক দেখেন নি ?
-না ! আজকে ঠিক লগিন করা হয় নি !
হাসতে হাসতেই রিয়াদ বলল
-লগিন করে দেখেন, বুঝতে পারবেন ! আর এর জন্য কিন্তু আমার পুরস্কার চাই!
-কি ? বলবা তো ?
-আপনি নিজেরই দেখেন !
আমি ঠিক বুঝলাম না ! সমস্যা কি আজকে সবাই এমন রহস্য করে কেন কথা বলছে ! ফোন রেখে আমি ফেসবুকে লগিন করলাম ! লগিন করতেই আমার চোখ চরখ গাছে । রিয়াদ আমাকে একটা ছবি ট্যাগ করেছে । ছবিতে দেখা যাচ্ছা মিরা আমার টাই বাঁধছে । আজকে সকালে মিরা যখন টাই বাঁধছিল কোন ফাঁকে রিয়াদ নিশ্চই ছবিটা তুলেছে । যে কেউ দেখলে মনে হবে একজ স্বামীর গলায় তার স্ত্রী টাই বেধে দিচ্ছে ! স্ত্রীর মুখ একটু গম্ভীর যেন স্বামীর উপর একটু রাগ করেছে ।
আহা !

নিচে আবার রিয়াদ লিখে দিয়েছে
আমার আপু আর দুলাভাই !
শ্যালোক মশাই ! তুমি একটা কাজের মত কাজ করেছো ! আচ্ছা এইটা দেখেই মনে হয় মিরার বান্ধবীরা কিছু একটা ভেবে নিয়েছে ।
সন্ধ্যার কিছু পরেই ক্যাফেতে হাজির হলাম ! মিরা আগে থেকেই উপস্থিত ছিল ওখানে ! আমি আসতে না আসতেই মিরা বলল
-আপনি এখনই বলুন !
-আরে আগে দম নিতে দাও !
-দম নিতে হবে না ! সত্য কথা বলেন ! বলেন যে আপনার সাথে আমার কিছু নেই !
আমি ওর বান্ধবীদের দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে বলল
-আমার সাথে মিরা কিছু নেই ! ঠিক আছে !
মিরা বলল
-দেখলি তো আমি মিথ্যা কথা বলছি না ! ঐ ছবিটা রিয়াদ আর উনি মিলে তুলেছে !
আমি প্রতিবাদ করে বলল
-কারেকশান প্লিজ ! আমি এর ভিতর নাই ! মোটেই না !
-আহা ! নাই না ! আপনিই হচ্ছেন মুলে এর ! আমি জানি না বুঝি ?
-তাই ? তুমি খুব জানো ?
-জি আমি জানি !
-তাই না ! ওকে ...
আমি ওর বন্ধুদের দিকে তাকিয়ে বললাম
-দেখো ভেবেছিলাম যে সত্যিটা লুকিয়ে রাখবো, কিন্তু এখন আর ঢেকে লাভ নেই ! আসলে মিরার সাথে গত মাসে আমি বিয়ে করেছি গোপনে ! বাসায় কেউ জানে না ! কাল রাত থেকে ওর সাথে একটু ঝগড়া চলছে । তাই আমাদের রাগ ভাঙ্গানোর জন্য রিয়াদ ছবি টা দিয়েছে !
এক নিঃস্বাসে কথা গুলো বলে আমি মিরার দিকে তাকালাম ! মিরা চোখে এক পাহাড় অবিশ্বাস নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে । মনে হচ্ছে ও যেন বিশ্বাস করতেই পারছে না কি হল এতোক্ষন ! কথা হারিয়ে ফেলেছে !
ওর বান্ধবীদের দিকে তাকিয়ে দেখি ওদের সবার মুখ হাসি হাসি ! একজন বলল
-আমি জানতাম ! আজকে যখন দেখলাম আপনি ওকে নামিয়ে দিলেন ক্যাম্পাসে তখনই সন্দেহ হয়েছিল ! এর আগেও দেখেছি আপনি ওকে নামিয়ে দিয়েছেন ! তারপর রিয়াদের সাথেও আপনাকে দেখেছি !
তারপর মিরার দিকে তাকিয়ে বলল
-মিরা তুই আমাদের কাছে না লুকালেই পারতিস ! আমরা তো তো বন্ধুই নাকি ?
আমি বললাম
-আমিও বলেছিলাম !
আমার কথা শুনে মিরা আবার আমার দিকে তাকালো ! চোখে সেই অবিশ্বাস ! আমি হাসি হাসি মুখ নিয়ে মিরার দিকে তাকিয়ে আছি ! আমার খুব মজা লাগছে ! আমার মনের কথা বুঝতে পেরেই মিরা বলল
-আপনার খুব মজা লাগছে না ?
-হুম !
-চলেন আপনি বাসায় চলেন ! আজকে আপনার আর রিয়াদের খবর আছে !
-আরে কিছু খেয়ে যাই !! তোমার বন্ধবীদের সাথে প্রথম বারের মত দেখা হল !
-চলেন ! খেতে হবে না !
আমাকে প্রায় জোর করেই মিরা বাইরে নিয়ে এল ! মিরা কন্ঠস্বর শুনে মনে হচ্ছে আমাকে পারলে ও কাঁচাই খেয়ে ফেলে । কিন্তু কিছুই করতে পারছে না !
গাড়িটে বসে মিরা যেন বোমা ফাটালো ! চিৎকার করে বলল
-আপনি কাজটা কেন করলেন ?
-তুমি আমাকে মিথ্যা অপবাদ কেন দিলে ?
-আপনি....আপনি..
আপনি..।
আমি হাসতে থাকি মনে ! তবে একটু চিন্তা লাগছিল রিয়াদের জন্য ! আজকে ওর কপালে কি আছে কে জানে !
ভেবেছিলাম ঘটনা মনে হয় এখানেই শেষ হয়ে যাবে । কিন্তু ঘটনা তো কেবল শুরু তখন ! বাসায় গিয়ে পৌছাতে না পোছাতেই মায়ের ফোন.......

মিরা আমার আগে আগে সিড়ি দিয়ে উঠছিল । ওর পা ফেলার আওয়াজ শুনেই বুঝতে পারছিলাম কি পরিমান রেগে আছে আমার উপর । আমার অবশ্য খুব বেশি কিছু মনে হচ্ছে না । একটু আধটু মজা করাই যায় ।
ওর বন্ধুদের সামনে ওমন ভাবে আমার উপর দোষ না চাপালে হয় তো এমন কিছুই বলতাম না !যাক যা বলেছি ভাল হয়েছে । টিট ফর ট্যাট !
যখন ফ্ল্যাটের কাছে চলে এসেছি তখনই ফোন বেজে উঠলো ! মার ফোন !
এই সময়ে ? মা সাধারন এই সময়ে ফোন দেয় না !
আমি ভেবেছিলাম রেগুলার যেভাবে কথা বলে সেরকম কথা বলার জন্যই মা ফোন দিয়েছে কিন্তু ফোন রিসিভ করেই সেই ভুল ভাঙ্গলো !
মা গম্ভীর কন্ঠে বলল
-কোথায় তুই ?
-এই তো মা । সিড়ি দিয়ে উঠছি ! উঠে পড়েছি !
আমাকে অবাক করে দিয়ে মা বলল
-মিরাদের বাসায় আয় !
-মানে ?
-কোন মানে নেই !
এই বলে মা ফোন রেখে দিল !
আচ্ছা আজকে আমার সাথে হচ্ছে টা কি ? সবাই যে যার মত কথা বলেই ফোন কেটে দিচ্ছে । আমার কথা শোনার প্রয়োজন বোধ করছে না ! আর মা মিরাদের বাসায় আসতে বলল কেন হঠাৎ ? তার মানে কি মা মিরাদের বাসায় ?
রাত যদিও বেশি হয় নাই তবু মার তো এখন আসার কথা না ! কোন ভাবেই না ।
আমি মিরার পাশে গিয়ে ওদের দরজায় সামনে দাড়ালাম । মিরা ততক্ষনে কলিংবেল টিপেছে । আমি ওর পাশে দাড়িয়েছে দেখে ওর মেজাজ টা আরও এক ধাপ বেড়ে গেল !
-কি ব্যাপার ? আপনি এখানে কেন ?
আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই মিরাদের বাসার দরজা খুলে গেল । সামনে মিরার মা দাড়িয়ে । মুখ যথেষ্ঠ গম্ভীর ! সকাল বেলা যেমন টা দেখেছিলাম তেমন টা মোটেও নয় ।
আমাদের দুজনকে দেখেই মিরার মা বলল
-তোমরা ভেতরে এসো !
বাসায় ভেতরে আমার আর মিরা জন্য অন্য কিছু অপেক্ষা করছিল । আমার মা বাবা আর বড় ভাই সাথে মিরার বাবা মা আর কে কে যেন রয়েছে । আমি তাদেরকে ঠিক চিনিও না ! মিরার দিকে তাকিয়ে দেখি ওর চোখেও কেমন একটা বিশ্ময় কাজ করছে । এতো গুলো মানুষ এখানে কেন এই প্রশ্ন আমার মত ওর মনেও জানতেছে ।
আমাকে দেখে মা বলল
-তুই এমমন একটা কাজ কেমন করে করলি ?
-কি করলাম ?
-কি করলি মানে ? মিরাকে বিয়ে করবি ভাল কথা আমাদের বলবি না ? আমরা কি মানা করতাম নাকি ?
আমি এবার সত্যি সত্যি আকাশ থেকে পড়লাম ! মা এসব কি বলছে । মিরাকে বিয়ে মানে কি ? তাহলে কি ?
মাও ঐ ছবি দেখেছে ?
কিন্তু কিভাবে ?
আমার তখনই মনে পড়লো আমার ভাইও আমার সাথে ফেসবুকে আছে । সাথে আরও বেশ কিছু কাজিন রাও ! ওরাই কি তাহলে ভুল বুঝেছে !
আমি মিরার দিকে তাকিয়ে দেখি ওর মুখ কেমন ফ্যাকাসে হয়ে গেছে । ও বলল
-আপনারা এসব কি বলছেন ? মামা তোমরা !
দেখলাম একজন আমাদের দিকে তাকিয়ে বলল
-হয়েছে ! আমরা এটা তোমাদের কাছ থেকে আশা করি নি ! আমাদের জানিয়ে করলে আমরা কি এমন আপত্তি করতাম ? রিয়াদকে বলতে পেরেছিস আমাদের কে বলতে পারিস নাই ?
রিয়াদ !! তাহলে রিয়াদ এর পেছনে ! ও ছবি তুলেছে তারপর সবার কাছে এই কথা বলেছে ?
অন্তত মিরার মা তো জনাতোই যে এই ছবির পেছনে আসল রহস্য । তিনিও যখন গম্ভীর তার মানে রিয়াদ কিছু একটা করেছে !
অবশ্যই কোন ভাবে সবার মনে একটা বিশ্বাস যুগিয়েছে যে আমি মিরাকে বিয়ে করেছি । যেহেতু রিয়াদ প্রায় সময়েই আমার বাসায় যায় ওর সাথে আমার ভাব আছে এই কথা বিশ্বাস করে নিতেই পারে !
ওদের কথা শুনে মিরা এতো অবাক হল যে কোন কথা ঠিক মত বলতেই পারলো না ! বাবা তখন মিরার বাবার দিকে তাকিয়ে বলল
-দেখুন বিয়াই সাহেব, ছেলে মেয়েরা একটা ভুল করে ফেলেছে ....
বিয়াই সাহেব !!!
আমাদের দুজনের মুখ থেকে একটা কথা একসাথে বের হল ! এসব কি হচ্ছে ?
বাবা তখনও বলে চলেছে
-আমাদের মনে আজকে রাতেই ওদের বিয়েটা হয়ে যাক ! আত্মীয় স্বজনেরা অনেক কথা বলছে ! আজকে যদি পারিবারিক ভাবে আবার বিয়েটা হয় তাহলে একটা দফা রফা হবে !
আরেক বার মানে ? আমি কবার বিয়ে করলাম ? আচ্ছা এদের মাথায় কি সমস্যা দেখা দিয়েছে ! এরা এসব কি বলছে ! একটা মাত্র ছবি দেখে এরা কত কিছু ভেবে বসেছে !

তখঈ আমার মাথায় চিন্তা এল, আচ্ছা আমি এতো চিন্তা করছি কেন ? এই সুযোগে মিরার সাথে যদি আমার বিয়েটা হয়ে যায় তাহলে তো লারে লাপ্পা ! আমি আর কোন কথা না বলে চুপ করে রইলাম ! মিরা বলল
-আপনারা কেন বুঝতে পারছেন না ! একটা ভুল হচ্ছে ! আমি বিয়ে করি নি । বিয়ে করতে চাই না !
মা মিরা কে ধকম দিয়ে বলল
-এই মেয়ে তোমাকে কথা বলতে বলেছে ? দেখছো না আমরা বড়রা এখানে কথা বলছি ! চুপ করে দাড়িয়ে থাকো !
ধমকটা মিরা আশা করে নি ! প্রথম কি বলবে ঠিক বুঝতে পারলো না ! আসলে মিরার সাথে আজকে সকাল থেকেই সব অদ্ভুদ ঘটনা ঘটছে মিরা কি করবে ঠিক বুঝতে পারছে না ! মিরা একবার ওর বাবা মার দিকে তাকালো তারপর আমার দিকে তাকালো ! ওর চোখে খানিকটা পানি দেখতে পেলাম মনে হল ! মিরা রুম ছেড়ে বাইরে বের হয়ে এল ! নিজের রুমের দিকে নয় একবারে বাইরে দিকে !

আমিও রুম থেকে বেরিয়ে প্রথমে রিয়াদ কে ফোন দিলাম !
-দুলাভাই ! কেমন কাটছে ?
-তুমি কি করেছো বলতো ? আর কি বলেছো সবাই কে ?
আমার কথা শুনে রিয়াদ আবার হাসলো ! বলল
-বলেছিলাম না আমার একটা পুরস্কার পাওনা আছে । সেইটা রেডি রাখেন । আর যে যা বলে কেবল হ্যা হ্যা বলে যান ! দেখবেন কাজ হয়ে যাবে !
এবারও রিয়াদ আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফোন রেখে দিল ! আমি মিরার পেছন পেছন ছাদের দিকে ছুটলাম !
মিরা এক কোনে দাড়িয়ে রয়েছে অন্ধকারে ! চাঁদের আলো অবশ্য আছে ।
আমি কাছে যেতেই বলল
-আপনি তো এটাই চেয়েছিলেন তাই না ?
-দেখো আমিও ঠিক বুঝতে পারছি না ! সত্যি বলছি !
-হয়েছে ! আমি আগেই বলেছি ঢং করতে হবে না !
-প্লিজ ! একটু ....
-আপনি আমার সামনে থেকে যান !
-আমি চলে গেলেই কি সমাধান হবে ?
মিরা কোন কথা বলল না ! অন্য দিকে তাকিয়ে রইলো ! আমি বললাম
-আচ্ছা তুমি চিন্তা কর না ! তুমি যখন চাও না তখন বিয়ে হবে না ! বাবা মাকে বুঝিয়ে বললেই ওনারা বুঝতে পারবে ! তুমি চিন্তা কর না !
মিরা কোন কথা বললা না ! আমি আবার বললাম
-ওনাদের কে বলার আগে কি কিছুক্ষন থাকবো এখানে ? এর পরে হয়তো সুযোগ নাও আসতে পারে ! আসলে নিচে তোমার বাবা মা আর আমার বাবা মা মিলে আমাদের বিয়ের প্লান করছে আর এখানে আমরা দুজন দাড়িয়ে চাঁদের আলো দেখছি এটা ভাবতেই ভাল লাগছে !
মিরা এবারও কোন কথা বলল না ! চুপ করে দাড়িয়ে রইলো !
আরও একটু কাছে গিয়ে বলল
-একটা কথা বলি ?
অনেক টা সময় পর মিরা বলল
-কি ?
-আমাকে টাই বাঁধা শিখাবে ?
-কেন ?
-না মানে তোমাকে যদি বিয়ে না করতে পারি তাহলে আমার টাই বেঁধে কে দিবে ?
মিরা আবারও আমার দিকে কঠিন চোখে তাকিয়ে রইলো । বাইরে অন্ধকার হলেও চাঁদের আলোতে ওর কাঠিন্য বেশ বোঝা যাচ্ছিল !
আমি বললাম
-দেখও এই টুক আমার জন্য তোমার করা উচিৎ নাকি ? মনে কর প্রতিদিন তোমাদের বাসার সামনে গিয়ে টাই বাঁধাটা কেমন লাগবে বলতো ! আর আজকের পরে তোমার মা মনে হয় আমাকে তোমাদের বাসায় ঢুকতেই দিবে না !
মিরা আমার দিকে কঠিন চোখে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হেসে ফেলল হঠাৎ করেই !
-আপনার খুব মজা লাগছে না তাই না ?
-হুম !
-এদিকে ষসেন !
আমি এগিয়ে গেলাম মিরার দিকে মিরা আমার গলা থেকে টাই টা খুলে আবার যত্ন করে বাঁধতে লাগলো ! ও মনযোগ দিয়ে টাই বাঁধছে আর কথা বলছে । কোন টা পরে কোনটা হবে আমাকে শিখাচ্ছে ! আর আমি এই আবছায়া আলোতে ওর চেহারা দেখছি ! মনে হচ্ছে স্বপ্ন দেখছি ! এতো সুন্দর স্বপ্ন আর দেখেছি কি না কে জানে !
-কি দেখেছেন ?
-হুম !
-পারবেন এখন একা একা !
-নাহ !
-তাহলে কি দেখলেন এতোক্ষন ?
-তোমাকে !
-আপনি কি চান আমার কাছে বলেন তো ? সত্যি করে বলেন ?
-বিয়ের জন্য হ্যা বলে দাও আপাতত ! আমার না ইচ্ছে করছে না বিয়েটা আটকাতে ! প্রতিদিন সকালে তুমি আমার টাই বেঁধে দিবে এই সুযোগটা আমার হাত ছাড়া করতে ইচ্ছে করছে না ! একদম না !
-তাই না ! তাহলে কেবল টাই বাঁধার জন্য আমাকর বিয়ে করতে চান ?
-একবার হ্যা বল তো তারপর দেখবে কিসের জন্য বিয়ে করতে চাইছি !
-এই খবরদার পঁচা কথা বলবেন না !
-পঁচা কথা কোথায় বললাম ?
-এই যে বললেন !
-মোটেই না ! আমি কিছু বলি নি, তুমি চাচ্ছ আমি বলি !
-জি না ! মোটেই না !
কখন যে আমাদের পিছনে কেউ চলে এসেছে আমরা লক্ষই করি নি ! মিরার হাত তখনও আমার টাইতেই আছে !
কাশির শব্দে দুজনেই চুপ করে গেলাম । পেছনে তাকিয়ে দেখি মিরার সেই মামা ! আমাদের দিকে তাকিয়ে মামা বলল
-এর পরেও বিশ্বাস করতে হবে যে তোরা বিয়ে করিস নি । এমন ভাবে কেবল স্বামী স্ত্রীই ঝগড়া করতে পারে !
আমি কোন কিছু না ভেবে বললাম
-ঠিক !
মিরা আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-কি বলছেন একটু আগে ?
-আমার কিছু মনে নেই কি বলেছি !
-দেখেন ভাল হবে না বলছি !
-না হোক । আমি এই সুযোগ হাত ছাড়া করবো না কিছুতেই ! কিছুতেই না !
মামা বলল
-অনেক কথা হয়েছে । এবার নিচে চল ! আজকে রাতেই ঝামেলা শেষ হোক !
-মামা ! একটু বোঝার চেষ্টা কর !
-শোন মিরা ! তোদের বিয়ে হোক আর নাই হোক, একটা শুনে রাখ এই ছেলের সাথেই তোর বিয়ে হবে । তোর ঐ ছবি আমাদের আত্মীয় স্বজন সবাই দেখেছে । এখন যদি সবাই শোনে এই ছেলে তোর স্বামী না একবার ভেবেছিস কি হবে ? কোন কথা শুনতে চাই না চল এখনই !
সত্যি সত্যি মিরা রসাথে রাতের বেলাটেই বিয়ে হয়ে গেল । মিরা আমার ঘরে ঢুকে বেশ অবাক হল বাসর ঘর সাজানো দেখে ! আমাকে প্রশ্ন করলো
-এই ঘর কে সাজিয়েছে ?
-কেউ হয়তো সাজিয়েছে !
-এতো জলদি ?
-আজকাল সব রেডিমেড পাওয়া যায় ! সুন্দর হয়েছে না ?
-হুম !
তারপর আমার দিকে একটু তাকিয়ে থেকে বলল
-আপনি এই কাজটা ভাল করলেন, মনে রেখেন !
-মানে কি ? বিয়ে হয়ে গেছে এখনও এই কথা বলছো ?
-বিয়ে করার মজা টের পাবেন আপনি হাড়ে হাড়ে ! দাড়ান আপনাকে মজা দেখাচ্ছি ! আর রিয়াদ কে হাতের কাছে পাই একবার !! শালা দুলাভাইকে একসাথে দেখে নেব !!
আমি হাসলাম কেবল ! মিরা তখন একটু শকড থাকলেও এখন মোটামুটি সামলে নিয়েছে । ছাদে চিৎকার চেঁচামিচি করলেই ঘরে এসে মিরা আর বেশি উচ্চ বাচ্চ করে নি । মা মিরার পাশে বসে ছিলেন । তাছাড়া পরিবারের আরও অনেকেই ছিল ! আমার চোখ বারবার রিয়াদ কে খুজছিল !। একবার কেবল দেখলাম এক কোনায় বসে মুচকি মুচকি হাসছে । আজকের এই ঘটনা ও না থাকলে হয় তো হতোই না ! বাসর ঘরটাও ঐ সাজিয়েছে ! শালা বাবু একটা কাজের মত কাজ করেছে !
যাক ! শেষ পর্যন্ত বদ মেয়েটাকে দিয়ে সারা জীবন আমার টাই বাঁধানোর একটা পাকাপোক্ত ব্যবস্থা হল !

ভালোবেসেছি তোমাকে প্রথম চোখের আলোতে এসেছ যখন

হঠাৎ এসেছিলে চোখের
আলোতে হারিয়ে ফেলেছি এক
ঝলকে
তবুও তুমি ছিলে চোখের
কোণে আগলে রেখেছি বড় যতনে
,
,
ভালোবেসেছি তোমাকে প্রথম
চোখের
আলোতে এসেছ যখন
ছিলে হ্রদয়জুড়ে প্রতিক্ষণে ভালোবাসা তো হয়না মনের
বিপরীতে।।