মেয়েটির চলার পথের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে ছিলাম। পরে হাটা ধরলাম... আমার গন্তব্যে..... বেশ কিছু দিন পরের কথা......

~ এই যে শুনছেন...
অবাক হয়ে পেছনে তাকালাম।
অষ্টাদশী এক সুন্দরী রমনী আমাকে উদ্দেশ্য করে সামনে এগিয়ে আসছে। হকচকিয়ে গেলাম একটু...........
ভাইয়া একটু দেখবেন কয়টা বাজে..!!!
চোখ দুটি স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বড় করে বললাম....
~ স্যরি, আমার কাছে ঘড়ি নেই।
~ মোবাইল তো আছে..!!
~ হ্যাঁ তা আছে...
~ দেখুন তো কয়টা বাজে....

পকেট থেকে নোকিয়ার ১১০০ মডেলের ফোন টা বের করে সময় টা বললাম।
মেয়েটি তাচ্ছিল্য চোখে আমার দিকে তাকিয়ে হনহনিয়ে চলে গেল।
মেয়েটির চলার পথের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে ছিলাম। পরে হাটা ধরলাম...
আমার গন্তব্যে.....
বেশ কিছু দিন পরের কথা......
নিউমার্কেটের ফুটওভার ব্রীজের উপর দাড়িয়ে ছিলাম। আশেপাশে মানুষ কিলবিল করছিলো।

ব্রীজের উপর থেকে হাত ঝুলিয়ে নীচে তাকিয়ে ছিলাম।
হঠাৎ, চোখ পড়লো রাস্তার অপরদিকে একটি মেয়ের দিকে। মেয়েটির চেহারা অসম্ভব পরিচিত মনে হচ্ছিলো। অনেকক্ষণ চিন্তা করে মনে পরলো যে এটাই সেই সময় জিজ্ঞাসুকারী মেয়েটি।
ব্রীজের উপর থেকে দাড়িয়ে দাড়িয়ে মেয়েটির অদ্ভূত পায়াচারী দেখছিলাম।
একটু পর মেয়েটি একটা ছেলে কে ডাক দিলো। ছেলে টিকে ভদ্রঘরেরই মনে হলো। দেখতেও যথেষ্ঠ স্মার্ট ছিলো।
মেয়েটি ছেলেটিকে ডাক দিয়ে বললো......
~ এই যে শুনুন।
~ জ্বী আমাকে..!!!
~ জ্বী আপনাকে.. আমি একটু বিপদে পড়েছি। একটু দেখবেন কয়টা বাজে...!!!!!!

ছেলেটি সুন্দরী মেয়েটির দিকে তাকিয়ে পকেট থেকে ইয়া বড় এক স্যামসাং মোবাইল বের করে মেয়েটিকে সঠিক টাইম বলে দিলো।
~ মেয়েটি ছোট খাটো একটা হতাশার শব্দ সৃষ্টি করে কাঁদো কাঁদো স্বরে বললো আমি শেষ।
সুন্দরী মেয়েটির বিপদের অকৃত্রিম সাথী হবার জন্য ছেলেটি জিজ্ঞেস করলো....
~ কি হয়েছে..?? কোন সমস্যা..!!!
~ আসলে হয়েছে কি আমার কোচিং শুরু হয়ে গিয়েছে। আমি এখনো পৌছতে পারি নি।

~ কোচিং কোথায় আপনার..?
~ ফার্মগেটে.. আজকে প্রথম ক্লাস। আর আমি ফার্মগেট চিনি না।
~ ছেলেটির চোখে মৃদু মায়া দেখা যাচ্ছিলো মেয়েটির জন্য।
~ আপনি কোথায় যাচ্ছিলেন..? ( মেয়ে)
~ আমিও ফার্মগেটের ওদিকেই যাচ্ছিলাম।
~ আমি কি আপনার সাথে যেতে পারি..!!! আমি ফার্মগেট চিনি না.. ( মায়াবী চোখে)
~ না না.. আপত্তি থাকবে কেন। চলুন একসাথে যাই।
অতঃপর, ছেলেটি মেয়েটির সাথে রিকশায় করে চলে গেলো।
ব্রীজের উপর থেকে দাড়িয়ে দাড়িয়ে দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত রিকশাটার দিকে তাকিয়ে ছিলাম।

উৎফুল ছেলেটি হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে মেয়েটিকে কিছু বলছিলো।
মেয়েটি চুপচাপ ছেলেটির কথা শুনছিলো।
মনে মনে ভাবছিলাম হয়তো রিকশা থেকে নামার পর ছেলেটি মেয়েটার ফোন নম্বর চাবে। মেয়েটিও হয়তো দিয়ে দিবে। মুঠোফনের মাধ্যমেই হয়তো তাদের প্রেমের মধুর সম্পর্ক গড়ে উঠবে।
অনেকক্ষন থাকার পর ব্রীজের উপর থেকে নেমে হেটে হেটে বাসায় যাচ্ছিলাম।
পকেটের অবস্থা খুব খারাপ।
রিকশা দিয়ে গেলে বিড়ির টাকায় শর্ট পড়বে। বিড়ি খেলে রিকশাতে যাওয়া যাবে না।

ভেবে চিন্তে রিকশা ছেড়ে বিড়ি ধরিয়ে হেটে হেটে বাসায় যাচ্ছি।
কাঁটাবনের সামনে ছোটখাটো একটা জটলা দেখলাম। ভীড় ঠেলে এগিয়ে যেয়ে দেখি সেই ছেলেটি রাস্তায় অচেতন হয়ে পড়ে আছে।
ছেলেটির মুখে পানি ঢালার পর ছেলেটির জ্ঞান ফিরতেই সে চিৎকার করে মেয়েটিকে অশ্রাব্য ভাষায় গালমন্দ করছিলো।
কিছুক্ষন পর পুলিশ এসে ছেলেটির জবানবন্দি নেয়.........
ছেলেটি বলে যে কোন এক মেয়ের সাথে রিকশায় আসার সময় রিকশা কাঁটাবনের চিপা গলিতে নিয়ে তার চোখে কি যেনো মলম লাগিয়ে দেয়।
জ্ঞান ফেরার পর দেখে সে এখানে। তার পকেট থেকে ইয়া বড় চ্যামচাং মোবাইল ও মানিব্যাগ গায়েব হয়ে গিয়েছে।
পুলিশ পান চিবিয়ে চিবিয়ে ছেলেটির কথা শুনছিলো।
তারপর ছেলেটিকে নিয়ে পুলিশ চলে গেলো।
ঘটনার সত্যতা আমার চোখের সামনে দেখা। পকেট থেকে নোকিয়া ১১১০ মডেলের ফোন টিকে একবার দেখে মুচকি হাসি দিলাম।
পকেটে নোকিয়া ১১১০ সেট নিয়ে হাটা বিশেষ খারাপ কিছু না।
উপলব্ধি বোধটা সেদিন ভালো মতই মনের ভেতর গেঁথে গিয়েছিলো।

হে ১১১০.....
তুমি মোরে করেছো মহান...
কমিয়েছো সম্মান....
বাঁচিয়ে দিয়েছো প্রাণ....